আখরোট: পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুপারফুড
প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিগুণে ভরপুর বাদামজাতীয় খাবারের মধ্যে আখরোট (Walnut) অন্যতম। এটি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, বরং শরীরের নানা ধরনের উপকারে আসে বলেই দিন দিন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ডায়েটে এই বাদাম জায়গা করে নিচ্ছে।
চলুন এবার জানি, আখরোটে কী কী পুষ্টি উপাদান রয়েছে এবং এটি কীভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
আখরোটে কী কী পুষ্টি উপাদান আছে?
প্রায় ২৮ গ্রাম বা ৭টি মাঝারি আকারের আখরোটে পাওয়া যায়:
- ১৮৫ ক্যালরি
- ৪.৩ গ্রাম প্রোটিন
- ১৮.৫ গ্রাম চর্বি (যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড)
- ৩.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১.৯ গ্রাম ফাইবার
এছাড়াও রয়েছে:
- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, এবং জিঙ্ক
- ভিটামিন E, B6
- শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট—বিশেষ করে পলিফেনলস
আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
১. হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে
আখরোটে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালিকে সচল রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
২. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়
এই বাদামে থাকা উপাদানগুলো স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে, একাগ্রতা বাড়ায় এবং আলঝেইমার জাতীয় সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
আখরোট খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এটি বিশেষভাবে ডায়েটিংয়ে থাকা ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে
আখরোটে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শরীরের কোষকে ক্যান্সারের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়।
৫. ত্বক ও চুলের জন্য ভালো
ভিটামিন E ও বায়োটিন চুলের গোড়া মজবুত করে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখে। এটি বয়সের ছাপ কমাতেও সাহায্য করে।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখরোট উপকারী হতে পারে কারণ এটি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. ঘুম ভালো হয়
আখরোটে থাকা প্রাকৃতিক মেলাটোনিন স্নিগ্ধ ঘুম আনতে সহায়তা করে, বিশেষ করে যারা অনিদ্রায় ভোগেন।
৮. হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে
আখরোটে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস হাড় এবং দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
আখরোট খাওয়ার কিছু উপায়
আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সর্বোচ্চভাবে পেতে হলে সঠিকভাবে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। নিচে কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো:
- সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে খাওয়া: ২-৩টি আখরোট সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে এটি সহজে হজম হয় এবং পুষ্টিগুণ ভালোভাবে কাজ করে।
- স্মুদি, ওটমিল বা সালাদে মিশিয়ে: এসব স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে আখরোট মিশিয়ে খেলে স্বাদ ও পুষ্টি—দুটোই বাড়ে।
- ডেজার্ট বা বেকড আইটেমে: কেক, বিস্কুট, বা হেলদি বার-এ আখরোট ব্যবহার করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর স্ন্যাকস তৈরি করা যায়।
সতর্কতা:
- অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন: এতে ক্যালরি বেশি থাকায় বেশি খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
- অ্যালার্জির বিষয়টি খেয়াল রাখুন: কিছু মানুষের বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। তাই নতুনভাবে খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া ভালো।
- পরিমিত পরিমাণ গ্রহণ করুন: প্রতিদিন ২-৪টি আখরোট সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী।
উপসংহার:
সুস্থ জীবনধারার অংশ হিসেবে আখরোট হতে পারে একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান। এটি শুধুই একটি বাদাম নয়, বরং একে বলা চলে “প্রাকৃতিক ওষুধ”। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত আখরোট রাখলে আপনি পেতে পারেন হৃদরোগ প্রতিরোধ, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন, ত্বকের সৌন্দর্য ও আরও বহু উপকারিতা।
মনে রাখুন—স্বাস্থ্যই সম্পদ। তাই সুস্থ থাকার পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে আজই আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন পুষ্টিকর আখরোট।